শিল্প মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ৬১ কোটি টাকা ব্যয় করে মাদারীপুরে বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণ করা হয়। উদ্বোধনের আড়াই বছরেও বরাদ্দ হয়নি অর্ধেক শিল্প প্লট। ব্যবসায়িক পরিবেশ না থাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আগ্রহ নেই বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। এদিকে নানা সমস্যায় জর্জরিত পুরাতন বিসিক শিল্প নগরীও। শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে ফার্নিচার, সেনেটারি আর করাত কল গড়ে উঠেছে এখানে। তবে শিগগরিই এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।জানা যায়, ১৯৮৭ সালে মাদারীপুরে বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন। প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সেখানে।
শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিবর্তে গড়ে ওঠে ফার্নিচার, সেনেটারি ও করাত কল। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শিল্পায়নের লক্ষ্যে বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয় সরকার। সদর উপজেলার মহিষেরচর এলাকায় ২০ একর জমি নিয়ে গড়ে ওঠে নতুন বিসিক শিল্প নগরী। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল এর উদ্বোধনও করা হয়। ১৮টি শিল্প ইউনিটে ৪৬টি প্লটে ভাগ করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের আড়াই বছরে প্লট বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ২৪টি। ২২টি প্লট এখনও বরাদ্দই হয়নি। এছাড়া বরাদ্দ হওয়া প্লটেও গড়ে ওঠেনি শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কলকারখানা।
শিল্প উদ্যোক্তাদের দাবি, ভূমি উন্নয়ন, পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, গ্যাস সংযোগসহ ব্যবসায়িক পরিবেশ না থাকায় কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এছাড়া প্লটের অতিরিক্ত দাম হওয়ায় বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। নতুন বিসিক শিল্প নগরী চালু হলে বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি পরিবর্তন হবে জেলার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার, মনে করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাদারীপুর-শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের কোলঘেঁষে গড়ে ৬০ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠে নতুন বিসিক শিল্প নগরী। উদ্বোধনের আড়াই বছরে একটি প্লটে পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়েছে। আরেকটি প্লটে আংশিক কাজ শেষ হয়েছে। বাকি স্থানগুলোতে ঘাস, লতাপাতা আর জঙ্গলে ছেঁয়ে গেছে। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় সরকারের এই মহতি উদ্যোগ অনেকটাই ভেস্তে যেতে বসেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। তাই সব জটিলতা কাটিয়ে শিগগিরই নতুন বিসিক শিল্প নগরী পরিপূর্ণভাবে চালুর দাবি এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের।
হানি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধিকারী আনোয়ার সরদার বলেন, আড়াই বছর আগে আধুনিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য নতুন বিসিকে একটি প্লট বরাদ্দ নেই। নতুন ভবন নির্মাণও করেছি। এখানে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছে না। যার ফলে লোকজনের তেমন উপস্থিতি নেই। আমি দুই কোটি টাকা খরচ করেও কোন উপকার পাচ্ছি না। এখানে সব ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করলে সবার লাভ হতো।
মাদারীপুর পুস্তক সমিতির সভাপতি অলিউল আহসান কাজল বলেন, ব্যবসায়িক পরিবেশ না থাকায় নতুন বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আগ্রহ নেই ব্যবসায়ীদের। এটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা। কারণ আড়াই বছরেও কোন উপকার পায়নি প্লট বরাদ্দ নেয়া ব্যক্তিরা। সেখানে ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করা অতি জরুরি।
শহরের বিথি মিনি বাজারের স্বত্ত্বাধিকারী সোহেল রানা বলেন, অনেক বার চিন্তুা করেও নতুন বিসিকে বিনিয়োগ করা থেকে ফিরে এসেছি। এর অন্যতম কারণ হলো, সেখানে ভূমি উন্নয়ন, পানি সরবরাহ, পয়োনিষ্কাশন, গ্যাস সংযোগসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নেই। এগুলো পরিপূর্ণভাবে নতুন বিসিকে দেয়া হলে অনেক ব্যবসায়ী ও উদ্দোক্তাদের শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আগ্রহ তৈরি হবে।
মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর সহকারি মহাব্যবস্থাপক মো. মাহামাদুল হাসান বলেন, নতুন বিসিক শিল্প নগরীতে নতুন নতুন উদ্দ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করাতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নতুন বিসিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণে আগ্রহ বাড়াতে ব্যবসায়ীদের বলা হচ্ছে। প্লট বরাদ্দের জন্য বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Voice Protidin Desk